Thursday, March 13, 2025

জীবন বদলানোর গল্প

 সাব্বিরের নতুন সকাল: এক জীবন বদলে দেওয়া গল্প


অন্ধকারের ভিতর আলোর খোঁজ

mmmmmmmmmmmmm

সাব্বিরের শৈশব মোটেও রঙিন ছিল না। বরং তার জীবন ছিল অভাব, কষ্ট আর হতাশায় ভরা। তার বাবা একজন দিনমজুর, মা গৃহিণী। পাঁচজনের সংসারে প্রতিদিন খাবারের ব্যবস্থা করাই ছিল বড় চ্যালেঞ্জ। তাই অন্য ছেলেমেয়েরা যখন স্কুলে যেত, তখন সাব্বিরকে বাবার সঙ্গে কাজ করতে হতো।


কিন্তু সে মনের ভিতরে সবসময় স্বপ্ন দেখত—একদিন সব বদলাবে। কিন্তু কীভাবে? সে জানত না।


একটি ভুল সিদ্ধান্ত


১৫ বছর বয়সে একদিন সাব্বির এক ভয়ানক সিদ্ধান্ত নিল। তার মনে হলো, “এভাবে খেটে মরার চেয়ে অন্য কোনো সহজ উপায় খুঁজতে হবে!”


সে শহরে গিয়ে এক বন্ধুর সাথে জড়িয়ে পড়ল অবৈধ কাজের সঙ্গে। প্রথমে ছোটখাটো কাজ, তারপর ধীরে ধীরে বড় ঝুঁকির দিকে যেতে থাকল। টাকা আসছিল, কিন্তু ভয় লেগে থাকত সবসময়।


একদিন গভীর রাতে পুলিশ একদল ছেলেকে ধরল, যাদের মধ্যে ছিল সাব্বিরও। ভাগ্য ভালো, প্রথম অপরাধ হওয়ায় সাব্বিরকে ছেড়ে দেওয়া হলো, তবে সে বুঝতে পারল—এভাবে জীবন কাটালে একদিন তার পরিণতি হবে ভয়ংকর।


নতুন পথে যাত্রা


জীবনের এই ভয়ংকর অভিজ্ঞতার পর সাব্বির ঠিক করল, কিছু একটা শিখতে হবে, ভালো কিছু করতে হবে। কিন্তু কী করবে?


একদিন সে ইউটিউবে ভিডিও দেখছিল। সেখানে একজন বলছিলেন, “তুমি যদি গরিব পরিবারে জন্ম নাও, সেটা তোমার দোষ না। কিন্তু তুমি যদি গরিবই থেকে যাও, সেটা তোমার দোষ!”

mmmmmmmmmmm

এই কথাটা তার মনে গেঁথে গেল।


তারপর একদিন সে পাশের গ্রামের এক আত্মীয়ের কাছে গেল, যিনি শহরে একটা গ্যারেজ চালাতেন। সাব্বির তাকে বলল, “কাকা, আমি কিছু শিখতে চাই। আমি শুধু কাজ শিখব, কিছু চাই না!”


সেই কাকা হেসে বললেন, “হাত পুড়বে, শরীরে গ্রীস লাগবে, পারবে?”

সাব্বির বলল, “যে জীবন আমাকে পুড়িয়েছে, তার চেয়ে গরম আর কিছুই হতে পারে না!”


কঠোর পরিশ্রমের গল্প


প্রথমদিকে কাজ শেখা খুব কঠিন ছিল। সাব্বিরের হাতে গ্রীস লেগে থাকত, গরম যন্ত্রের ছোঁয়ায় বারবার হাত পুড়ত। ওস্তাদরা মাঝে মাঝে ধমক দিতেন।


কিন্তু সে দমে যেত না। রাতে লুকিয়ে ইউটিউবে ভিডিও দেখত, ইঞ্জিন মেরামতের নতুন নতুন কৌশল শিখত।


একদিন এক মজার ঘটনা ঘটল। এক বড়লোক তার গাড়ি নিয়ে এলেন। গাড়ির ইঞ্জিনের সমস্যা হচ্ছিল, কিন্তু কেউ ঠিক করতে পারছিল না। সাব্বির গুগল ঘেঁটে সমাধান বের করল এবং একঘণ্টার মধ্যে গাড়িটি ঠিক করে দিল!


ওয়ার্কশপের মালিক তার প্রতিভা দেখে অবাক হয়ে গেলেন এবং তাকে আরও বড় দায়িত্ব দিলেন।

mmm

সফলতার পথে প্রথম ধাপ


দুই বছর পর, সাব্বির এত ভালো হয়ে গেল যে সে নিজেই ছোটখাটো কাজ নিতে শুরু করল। গ্রামের লোকজন তার কাছে আসতে লাগল, কারণ সে দ্রুত কাজ করত এবং কম খরচ নিত।


তখন তার মাথায় আসল, “নিজের কিছু করতে হবে!”


সে তার সঞ্চিত টাকা দিয়ে পুরোনো যন্ত্রপাতি কিনে নিজের ছোট্ট একটা গ্যারেজ খুলল। প্রথমদিকে কাজ কম ছিল, কিন্তু সে নতুন পরিকল্পনা করল।

mmm

সে ফেসবুকে একটা পেজ খুলল, গুগল ম্যাপে নিজের গ্যারেজের নাম যোগ করল। এরপর প্রতিদিন একটি করে পোস্ট দিতে লাগল।


এভাবেই তার কাজের প্রচার শুরু হলো।


প্রকৃত সাফল্যের শুরু


কয়েক মাসের মধ্যে তার গ্যারেজের খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ল। মানুষ অনলাইনে বুকিং দিতে শুরু করল।


একদিন এক বড় কোম্পানি তাকে ডাকল তাদের গাড়ি মেরামত করার জন্য। সে যখন কাজ করল, তারা এতটাই খুশি হলো যে নিয়মিত কন্ট্রাক্ট দিয়ে দিল।


সাব্বিরের ব্যবসা ধীরে ধীরে বড় হতে থাকল।


একটি বড় ধাক্কা


সব কিছু যখন ভালো চলছিল, তখন একদিন গভীর রাতে তার গ্যারেজে আগুন লেগে গেল। সব পুড়ে ছাই হয়ে গেল।


সে ভেবেছিল, সব শেষ!


কিন্তু তার ওস্তাদ একদিন এসে বললেন, “সাব্বির, তুমি কি জানো? আগুন শুধু দুর্বল লোহাকে গলিয়ে ফেলে, কিন্তু শক্ত লোহাকে আরও মজবুত করে!”


এই কথাটা তার মনে গেঁথে গেল।


সে হাল ছাড়ল না। বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়দের সাহায্যে আবার নতুন করে শুরু করল।


আজকের সাব্বির


আজ, ১০ বছর পর, সাব্বির শুধু একজন সফল ব্যবসায়ীই নয়, বরং অনেক তরুণের অনুপ্রেরণা।


তার এখন তিনটি ওয়ার্কশপ, ৩০ জন কর্মচারী। এবং সে প্রতি বছর দরিদ্র ছেলেদের বিনা মূল্যে প্রশিক্ষণ দেয়, যেন কেউ তার মতো ভুল পথে না যায়।


একসময় যে ছেলেটি দরিদ্রতার কারণে হতাশ ছিল, আজ সে নিজেই অনেকের জীবন বদলানোর কারণ।


তার জীবনের মূল মন্ত্র হলো—


“তুমি যদি সত্যিই বদলাতে চাও, তবে এক মুহূর্তের জন্যও থেমো না। জীবন কঠিন হবে, সমস্যা আসবে, কিন্তু এগিয়ে যাও! কারণ তোমার স্বপ্নের চেয়ে বড় কোনো বাধা নেই!”

No comments:

Post a Comment

Life Changing story

 Sabbir’s New Dawn: A Life-Changing Story Finding Light in the Darkness m.m.m.m.m..mmmm Sabbir’s childhood was anything but colorful. His li...